Low Investment Buisness Plans : বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে চাকরির যা অবস্থা, বিশেষত বেসরকারি চাকরির যা দুরবস্থা, তাতে অনেকেই এখন চাকরির পাশাপাশি বাড়তি ইনকামের জন্য শুরু করছেন ব্যবসা। কিন্তু পুঁজি না থাকার কারণে এই পথে এগোতে কিছুটা ভয় পান সবাই। তবে আর চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার কাছে যদি থাকে ১০ হাজার টাকা তাহলেই আপনি শুরু করতে পারেন ব্যবসা। আজ আমরা আপনাকে জানাবো এমন ২৫টি বিজনেস আইডিয়া (Buisness Ideas) যা ১০ হাজারের কম পুঁজি নিয়েই শুরু করা যায়।
১০ হাজারের কম পুঁজির ২৫টি বিজনেস আইডিয়া
অনলাইন শিক্ষকতা
মহামারীর পর থেকে অনলাইনে শিক্ষা দান করার বিষয়টি এখন বেশ প্রচলিত। বাড়িতে বসেই আপনি অনলাইনে পড়াশোনা, গান বা নাচ শিখিয়ে উপার্জন করতে পারেন। এছাড়া নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খুলে বিনা পুঁজিতে আয় করতে পারেন। নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন অনলাইন শিক্ষকতার বিভিন্ন পোর্টালে, তবে সেক্ষেত্রে আপনার শিক্ষা দানের স্টাইল হতে হবে ইউনিক। এছাড়া এই সমস্ত প্লাটফর্মে অংক, বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং, আঁকা, মার্কেটিং, ফটোগ্রাফি সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স আপলোড করেও আপনি শুরু করতে পারেন ব্যবসা।
হোম ডেলিভারি
বর্তমান প্রজন্মে এখন সকলের এতটাই ব্যস্ততা যে বাড়িতে রান্না করার সুযোগ হয়ে ওঠে না অনেকেরই। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মেটাতে আপনি হোম ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বাড়িতে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে মানুষের বাড়ি বাড়ি সময়মত পৌঁছে দিলেই আপনার ব্যবসার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। ছোটখাটো পরিবার অথবা যারা বাইরে কাজের বা পড়াশোনার সূত্রে রয়েছে, তাদের খাবার ডেলিভারির মাধ্যমেই আপনি শুরু করে দিতে পারেন আপনার ব্যবসা।
অনলাইন বেকারি
এখন যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানেই মানুষ কেক কাটতে ভীষণ ভালোবাসেন। আপনি যদি ঘরে বসেই বিভিন্ন রকমের কেক, পেস্ট্রি বা কুকিস বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার ব্যবসা দাঁড় করাতে সক্ষম হবেন। তবে এই ব্যবসার ক্ষেত্রে নিত্যনতুন ইউনিক আইডিয়া কাজে লাগাতে হবে আপনাকে।
কিয়স্ক
প্রথমেই আপনাকে জায়গা বেছে নিতে হবে। মনে রাখবেন অফিস স্কুল বা কলেজ অর্থাৎ যেখানে মানুষ বেশি যাতায়াত করেন সেখানেই আপনাকে ব্যবসা শুরু করতে হবে। কাঁচামাল হিসাবে দরকার ফল এবং রস তৈরি করার যন্ত্র। মাত্র ১০ হাজার টাকার মধ্যেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন আপনি। তবে অবশ্যই কিয়স্ক বসানোর অনুমতি পত্র যোগাড় করতে হবে এবং ভাড়া নিতে হবে জায়গা।
ট্রাভেল এজেন্সি
অনেকেই আছেন যারা একা ভ্রমণ করতে সাহস পান না। কোন না কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেই তারা ভ্রমণ করেন। আপনি যদি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা শুরু করতে চান, তাও আবার অল্প পুঁজিতে তাহলে আপনাকে হোস্ট এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।
ট্যুর গাইডের ব্যবসা
১০ হাজারের মধ্যে আপনি অনায়াসে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। ট্রেনের টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে হোটেল বুকিং পুরোটাই দায়িত্বে থাকবে আপনার। অফিস, স্কুল বা কলেজের বিভিন্ন ট্যুর যদি আপনি করাতে পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ব্যবসা সফল হবে। তবে এই ব্যবসাটির জন্য কিছুটা পড়াশোনা করতে হবে আপনাকে। কোথায় কোন হোটেলের কেমন রেট বা কখন কোথায় টিকিট অ্যাভেলেবেল রয়েছে তা সম্পর্কে সব সময় ওয়াকিবহল থাকতে হবে আপনাকে।
কাস্টমাইজড গয়না তৈরির ব্যবসা
সোনা বা রুপোর দাম যেভাবে আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে তাতে অনেকেই এখন কাস্টমাইজ বা হাতে বানানো গয়না পড়তে ভালোবাসেন। এই গয়না বানানোর উপকরণ কলকাতার বিভিন্ন বাজার থেকে কিনে এনে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যদি বানিয়ে দিতে পারেন তাহলেই কেল্লাফতে। এই ব্যবসাটিও ১০ হাজার টাকার মধ্যেই আপনি শুরু করতে পারবেন।
হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি
১০ হাজার টাকায় আপনি পেয়ে যাবেন প্রচুর হস্তশিল্প সামগ্রী। ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী হোক অথবা ছোট ছোট গয়না, এই সবকিছু গ্রামীণ শিল্পীদের থেকে কিনে এনে আপনি অনলাইন বা অফলাইনে বিক্রি করতে পারেন। তবে এই ব্যবসায় লাভের মুখ দেখা একটু চাপের।
টেলারিং ব্যবসা
আপনি যদি জামা কাপড় তৈরি করতে ভালোবাসেন এবং আপনার মধ্যে যদি থাকে সৃজনশীলতা, তাহলে অবশ্যই শুরু করতে পারেন এই কাজ। বাড়িতে বসেই ক্রেতাদের পছন্দমত ডিজাইন দিয়ে তৈরি করে দিতে পারেন তাদের পছন্দমত পোশাক। এখন অনলাইনে প্রচুর ডিজাইন পাওয়া যায়, সেগুলি বেছে নিয়ে একটি ক্যাটলক তৈরি করে রাখুন যাতে ক্রেতাদের দেখতে সুবিধা হয়।
বিউটিশিয়ান
সময়ের অভাবে এখন অনেকেই পার্লারে যেতে চান না। আপনি যদি বাড়িতে গিয়ে ক্রেতাদের ফেসিয়াল, মেনিকিওর, পেডিকিওর, স্পা করে দিতে পারেন, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই আপনি ভালো আয় করতে পারবেন। আপনি ভাল কাজ করলে লোকমুখেই আপনার খ্যাতি ছড়িয়ে যাবে। ১০ হাজারের মধ্যে আপনি শুরু করতে পারেন এই ব্যবসা।
মেকআপ আর্টিস্ট
এখন বিয়ের কনে থেকে শুরু করে নিমন্ত্রিত, সকলেই মেকআপ আর্টিস্টের কাছেই সাজুগুজু করতে ভালোবাসেন। শুধু তাই নয়, যে কোন অনুষ্ঠানেই মেকআপ আর্টিস্টের ডাক পড়ে। ১০ হাজার টাকার মধ্যেই আপনি সমস্ত মেক আপের জিনিস কিনে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার কাজই হবে আপনার পরিচয়।
নাচ-গান বা আঁকার স্কুল
এখন অনেক ছোট ছোট জায়গা ভাড়া পাওয়া যায় নাচ, গান বা আঁকা শেখানোর জন্য। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও এমন ঘর ভাড়া দেন অনেকেই। আপনিও চাইলে এমন একটি ছোট স্কুল শুরু করতে পারেন আপনার ট্যালেন্ট অনুযায়ী। তবে মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে কিছুটা ধৈর্যশীল হতে হবে আপনাকে।
বিদেশী ভাষা শিক্ষা
এখন চাকরির ক্ষেত্রে বাংলা বা ইংরেজির পাশাপাশি বিদেশি ভাষায় দক্ষতা থাকা ভীষণ আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। কোন একটি সংশ্লিষ্ট ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে আপনি সহজেই খুলে বুঝতে পারেন একটি স্কুল। তবে এক্ষেত্রেও কিছুটা ধৈর্যবান হতে হবে আপনাকে।
কনটেন্ট রাইটিং
ইংরেজি বা বাংলা ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনি অনায়াসে শুরু করতে পারেন কন্টেন রাইটিং-এর কাজ। বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে লিখে আপনি শুরু করতে পারেন আয়। এই লেখার বিভিন্ন কৌশল রয়েছে, যেমন সার্চ ইঞ্জিনে যাতে আপনার লেখা যাতে ওপরের দিকে স্থান পায়, তেমনভাবে লিখতে হবে আপনাকে। একবার কৌশলটি রপ্ত করে ফেললে খুব একটা অসুবিধা হবে না। ঘরে বসে বিনা পুঁজিতে আপনি আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেল
এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়াতে সবথেকে বেশি আয় করার মাধ্যম হলো Youtube। রান্না করার ভিডিও থেকে শিক্ষামূলক ভিডিও, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও পোস্ট করেও আপনি আয় করতে পারেন ইউটিউব থেকে। তবে চ্যানেলের ভিউয়ার্স এবং ফলোয়ারসের উপর নির্ভর করে আপনি অর্থ পাবেন। একবার আপনার ভিডিও রিচ পেয়ে গেলে বিজ্ঞাপন থেকেও টাকা উপার্জন করতে পারবেন আপনি।
ট্রান্সলেটর
এখন অনুবাদ করার কাজটির জনপ্রিয়তা প্রচুর। আইনি কাগজ বা মেডিক্যাল ফাইল, সিনেমা বা টিভি সিরিয়ালের সাবটাইটেল অনুবাদের কাজের এখন ব্যাপক চাহিদা। তবে এই কাজ শুরু করার আগে কাজটি সম্পর্কে ভালো করে পড়াশোনা করে নিতে হবে আপনাকে। অনুবাদ এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে নিয়মিত কাজ পাবেন আপনি।
গ্রাফিক ডিজাইনিং
কম্পিউটার আর প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার থাকলে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়েতেই আপনি শুরু করতে পারেন এই ব্যবসা। ঘরে বসেই গ্রাফিক ডিজাইনিং করে আয় করতে পারেন ভালো অর্থ। এই ডিজিটাল যুগে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া তাই এই কাজই ভালোভাবে শিখে আজকেই শুরু করতে পারেন গ্রাফিক ডিজাইনিং।
ওয়েডিং প্ল্যানার
ছেলে হোক অথবা মেয়ে, বিয়ে বাড়ির হাজারও ঝক্কি পোহাতে হয় ছেলে অথবা মেয়ের বাবা মাকে। অনেক বাড়িতেই লোকবল একেবারেই থাকে না তারা খাওয়া-দাওয়া থেকে বিয়ের কার্ড ছাপানো, ডেকোরেশন থেকে ফটোগ্রাফি সব কিছুরই দায়িত্ব দিয়ে দেন ওয়েডিং প্ল্যানারকে। আপনি যদি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই ভালো আয় করার সম্ভাবনা থাকবে। তবে এই ব্যাপারটি শুরু করার আগে একটি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট এবং ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখতে হবে আপনাকে।
অনলাইনে বাংলা বই বিক্রি
কলেজ স্ট্রিট যদি আপনার নখ দর্পণে হয় তাহলে আপনি সহজেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। অনেকেই আছেন যারা বিদেশে থাকেন বা বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না, তাদের থেকে বইয়ের অর্ডার নিয়ে তা তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু বইয়ের ছবি আপলোড করে প্রথমে সকলকে জানাতে হবে আপনার ব্যবসার কথা। তবে প্রচুর বই কিনে ব্যবসা শুরু করার প্রয়োজন নেই অর্ডার অনুযায়ী বই সংগ্রহ করে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিলেই আপনার ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
ছোট বা বড় যে কোন কোম্পানির ক্ষেত্রেই এখন সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড় মাধ্যম ব্যবসার ক্ষেত্রে। বড় বড় কোম্পানিদের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য নিজস্ব লোক থাকলেও ছোট ছোট কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য কম বেতনে কর্মী নিয়োগ করেন। বাড়িতে বসে বিনা বিনিয়োগে আপনি সহজেই শুরু করতে পারেন এই কাজ।
মিনারেল ওয়াটারের ব্যবসা শুরু
বছরের বেশিরভাগ সময় বিশেষত বর্ষাকালে জল থেকে ছড়ায় বিভিন্ন রোগ। অনেকেই আছেন যারা কিনে জল খান। ১০ হাজার টাকার মধ্যে যদি আপনি এই ব্যবসা শুরু করে লোকের বাড়ি বাড়ি মিনারেল ওয়াটার আসেন, সে ক্ষেত্রে অল্প পুঁজিতেই এই ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন আপনি। তবে মনে রাখবেন এটি পরিশ্রমসাধ্য একটি কাজ।
মোবাইল রিচার্জ এর দোকান
ডিজিটাল যুগে অনেকেই অনলাইনে রিচার্জ করলেও যারা বয়স্ক মানুষ রয়েছেন তারা এখনো দোকানে গিয়ে রিচার্জ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আপনি যদি ছোটখাটো একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে প্রতি রিচার্জ প্রতি ভালই লাভ হবে আপনার। এই ব্যবসা শুরু করতে গেলে নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। জানতে হবে বিভিন্ন অফার এবং কমিশন রেট।
টিফিন ডেলিভারি ব্যবসা
এখন শুধু বাড়ির পুরুষরা মহিলারাও কর্মরত তাই অফিসে যাওয়ার আগে প্রতিদিনের টিফিন তৈরি করতে রীতিমত সমস্যায় পড়তে হয় মহিলাদের। আপনি যদি অফিস টাইমের মধ্যে উন্নত মানের টিফিন তৈরি করে যদি বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতে পারেন তাহলে কম পুজিতেই এই ব্যবসা শুরু করে লাভের মুখ দেখতে পারেন আপনি। তবে আপনার রান্না যেন গ্রাহকদের পছন্দ হয়। মনে রাখবেন, অফিসের টিফিনের চাহিদা অনুযায়ী রান্না করতে হবে আপনাকে।
চায়ের দোকানের ব্যবসা
বাঙালি আর চা খায় না, তা হয় না। তবে পাতি চায়ের দোকান নয়, সাজিয়ে গুছিয়ে যদি একটি চায়ের দোকান খুলে ফেলতে পারেন তাহলে সকাল সন্ধ্যা আপনার চায়ের দোকানে কিন্তু বেশ ভালই। তবে মনে রাখবেন চায়ের পাশাপাশি বেশ কিছু স্নাক্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে আপনাকে।
ফুড ভ্যান
ফুড ভ্যান ভাড়া করে যদি ব্যবসা শুরু করেন তাহলে কোন দোকানের ঝামেলা থাকবে না। স্কুল অফিস বা কলেজের সামনে আপনি আপনার পছন্দমত সময়ে বিক্রি করতে পারবেন খাবার। ১০ হাজার টাকাতেই আপনি শুরু করতে পারবেন এই ব্যবসা।