একদিন তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন সকলে। তার পরিকল্পনা শুনে মনে হতো, এমন পরিকল্পনা কখনোই সার্থক হবে না। কখনোই ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পারবে না অজয় গুপ্ত। সেই অজয় গুপ্তের ব্র্যান্ড কেনার জন্যই একদিন প্রস্তাব দিয়েছিলেন আইটিসি , টাটা,নেসলে। কিভাবে শুরু হলো এই যাত্রা?
অজয় গুপ্ত, তার সংস্থা সস বানায়। বানায় চিনা খাবারের প্রয়োজনীয় মসলাপাতি। আজ থেকে ৩০ বছর আগে, ভারতীয়রা যখন রাস্তার ধারে ইনস্ট্যান্ট নুডুলস এবং রেডিমেড স্যুপ খেতে শিখেছে সবে, ঠিক তখনই এই আইডিয়া এসেছিল অজয়ের মাথায়। অজয় ভেবেছিলেন চিনা খাবার নিয়েই তিনি তৈরি করবেন ব্যবসা। ভারতীয়রা যে চিনা খাবার পছন্দ করছেন তাতে কি অভাব রয়েছে সেটাই জানা ছিল তার প্রথম পদক্ষেপ।
বেশ কয়েকজন ফুড টেস্টারদের রাস্তার ধারে চিনা খাবারের স্টলে পাঠিয়ে দেন তিনি। ফুড টেস্টাররা খাবার যাচাই করে অজয়কে জানান, ভারতে যে সমস্ত চিনা খাবার বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে সবথেকে বেশি যেটার অভাব রয়েছে তা হলো ভারতীয়ত্ব। খাবারের মধ্যে ভারতের কোন ছোঁয়া নেই। পুরোটাই রয়েছে প্রতিবেশী দেশের ছোঁয়া। এই কথা শুনেই এক নতুন ধরনের স্বাদ তৈরি করার কথা চিন্তাভাবনা করেন অজয়।
অজয় ঠিক করেন, এমন কিছু জিনিস তৈরি করবেন যাতে খাবার স্টল তো বটেই বাড়িতেও সহজে চিনা খাবারের স্বাদ যাতে পাওয়া যায়। অজয় তৈরি করেন চিনা খাবার বানানোর তিন রকমের সস, গ্রিন চিলি সস রেড চিলি সস এবং সয়া সস। চীনের চিং বা জিন সাম্রাজ্যের নামে তিনি এই সংস্থাটির নাম রাখেন। কিন্তু তৈরি কি করবেন সেটা ঠিক হলেও কোথায় বিক্রি করবেন তা নিয়ে তৈরি হল সংশয়।
প্রথমে দোকানে দোকানে এই সস বিক্রি করার কথা বলায় তারা মুখের উপর না বলে দেন। সকলেই যখন এই সস কিনতে মানা করে দেন ঠিক তখনই অজয় ঠিক করেন, তিনি তার তৈরি করা সস রাস্তার ধারে চিনা খাবারের দোকানে বিনামূল্যে দিয়ে দেবেন। স্বাভাবিকভাবেই বিনামূল্যে এই সমস্ত জিনিস পেলে কে আর হাতছাড়া করে!! ফলে কিছুদিনের মধ্যেই সস বিক্রি হয়ে গেল রাস্তার ধারের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় রেস্টুরেন্টে। এইভাবে ১৯৯৫ সালে তৈরি সংস্থাটি ১৯৯৬ সালেই নাগাল্যান্ড থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়।
১ বছরের মধ্যে ২.৫ কোটি টাকা দিয়ে সস বানানোর একটি নিজস্ব কারখানা তৈরি করেন অজয়। নাসিকে তৈরি এই কারখানা ভারতের প্রথম হিন্দু চাইনিজ খাবারের উপকরণ বানানোর কারখানা নামে পরিচিতি পায়। চিনা খাবারের মসলার পাশাপাশি ইটালি সহ বিভিন্ন দেশের সস তৈরি করা শুরু করল এই সংস্থাটি। ক্রমশই বিদেশি খাবার বানানোর উপকরণের একমাত্র ঠিকানা হয়ে উঠল অজয়ের সংস্থা।
২০১০ সালের মধ্যে চিনা খাবার তৈরির এই সংস্থাটির বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ১১০ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। সমাজ মাধ্যমের পরিধি ধীরে ধীরে বাড়ার পর অজয়ের মনে হয়, তার প্রচারে কোথাও খামতি থেকে যাচ্ছে তাই তিনি ঠিক করলেন এবার তিনি প্রচার করবেন বলিউডের হাত ধরে। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করলেন রণবীর সিংহকে। বিজ্ঞাপনে রণবীরের পদবীটি বদলে সংস্থার নাম দিয়ে দিলেন। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গেল সেই বিজ্ঞাপন। পাঁচ বছরে ১১০ কোটি টাকার বার্ষিক আয় বেড়ে গেল তিনগুণ। ততদিনে ভারতে প্রায় ১১ টি রাজ্যে দেড় লক্ষ দোকানে পৌঁছে গেছে অজয়ের সংস্থা।
আরও পড়ুন : একের বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন? জানেন এতে কী কী বিপদে পড়তে হবে আপনাকে?
আরও পড়ুন : ক্রিকেটে লবডঙ্কা, পড়াশোনাতেও অক্কা? পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা কে কতদূর পড়াশোনা করেছেন?
২০২৩ সালে সংস্থাটির মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০০ কোটি টাকা। অজয়ের সংস্থার জিনিস ততদিনে দেশের চার লক্ষ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। মূলধনের অন্তত ২৫ শতাংশ লাভ হচ্ছে অজয়ের। ঠিক এই মুহূর্তে নেসলে, আইটিসি, টাটার তরফ থেকে আসতে থাকে সংস্থাটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব। অবশেষে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে টাটার কাছে নিজের সংস্থা বিক্রি করে দিতে রাজি হন অজয়। এইভাবে শুধুমাত্র নিজের বুদ্ধির জোরে শূন্য থেকে শুরু করে আজ কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক অজয় গুপ্ত।
আরও পড়ুন : নীতা আম্বানির এই হাতঘড়ির দাম কত? টাকার অংক আপনার কল্পনারও বাইরে