Email : “রানার ছুটেছে খবরের বোঝা হাতে” সেও এক দিন ছিল যখন চিঠি পাঠাতে মাইলের পর মাইল ঘোড়ায় চড়ে অথবা হেঁটে যেতে হতো। তারপর ধীরে ধীরে যুগের পরিবর্তন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (Science And Technology) -র উন্নতিতে চিঠি পাঠানো হয়ে গেল সহজ। আবিষ্কার হল ইমেইল (Email)। শুধুমাত্র ইন্টারনেট পরিষেবার সাহায্যে চিঠি পাঠানো শুরু হল নিমেষে। বিশ্বব্যপী মানুষ ধন্য ধন্য করতে লাগলেন ইমেইল এর আবিষ্কর্তাকে অর্থাৎ রে টমালিনসন (Ray Tomlinson) কে। প্রকাশ্যেই এলো না ইমেইল এর আসল আবিষ্কারক ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিভা আয়াদুরাই (Shiva Ayyadurai) এর নাম। অন্তত এমনটাই দাবি করছেন শিভা আয়াদুরাই নিজে। তিনি নিজেই বলেছেন ইমেইল আবিষ্কারের নেপথ্যের কাহিনী।
তামিলনাড়ুর রাজাপালায়ামের শিভা আয়াদুরাই। জন্ম ভারতে হলেও মায়ের কর্মসূত্রে ১৯৭১ সালে চলে যান আমেরিকায়। ভর্তি হন নিউজার্সির লিভিংস্টোন স্কুলে। বয়স তখন ১৪। গ্রীষ্মের ছুটিতে শিখতে শুরু করেন কম্পিউটার। মা কাজ করতেন ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রিতে। একদিন মায়ের অফিসে গিয়ে শিভা দেখেন অফিসভর্তি লোক একঘর থেকে অন্যঘরে ছুটছেন চিঠি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন নথি নিয়ে। হঠাত শিভার মাথায় খেলে যায় বুদ্ধি। সে ভাবতে থাকে এই কাজ কিকরে সহজ করা যায়। সে ঠিক করে এমন এক সফটওয়্যার তৈরী করতে হবে যাতে শুধুমাত্র চেয়ারে বসেই কম সময়ে দ্রুত চিঠি বা ফাইল পাঠানো যাবে। এইভাবেই শিভা আবিষ্কার করে “Email”, এমনকি ১৯৮২ সালে শিভা “Email” এর কপিরাইটও পেয়ে যান।
সেই সময় শিভার আবিষ্কার তেমন জনপ্রিয় হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে “Email” এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার। ঠিক সেই সময় রে টমলিনসন দাবি করেন যে শিভা “Email” আবিষ্কার করার ৭ বছর আগে তিনি “Email” আবিষ্কার করেন। টমলিনসন আরও দাবি করেন ARPANET নামের তৎকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে ‘বেথিয়ন’ প্রযুক্তি কোম্পানির হয়ে ইমেইল আবিষ্কার করেন তিনি। এমনকি মার্কিন সেনাদের জন্যই নাকি টমলিনসন “Email” তৈরী করেন। রাতারাতি “Email” আবিষ্কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান রে টমলিনসন।
কিন্তু নিজের জেদ ছাড়েনি শিভা আয়াদুরাই। তিনি দাবি করেন, রে টমলিনসন কেবলমাত্র টেক্সট মেসেজ পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। কিন্তু বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ইমেইল পাঠানো হয় সেই পদ্ধতি আবিষ্কার করে শিভা। তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ইলেকট্রনিক মেসেজ আর “Email” যে এক নয় তা সামান্য রিসার্চ করলেই বোঝা যাবে।
আরও পড়ুন : জাতীয় সড়কের মাইল ফলকের আলাদা আলাদা রং হয় কেন? এই রং এর মানে কী?
আরও পড়ুন : একের বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন? জানেন এতে কী কী বিপদে পড়তে হবে আপনাকে?
শিভার পাশ থেকে সরে যায় বিভিন্ন সারির মিডিয়া। তারা বিভিন্ন ব্লগে শিভাকে আয়াদুরাইকে ছোটো দেখানোর চেষ্টা শুরু করে। এমনকি ওয়াশিংটন পোস্ট লেখেন, তারা ভুল করে তাঁদের প্রতিবেদনে শিভা আয়াদুরাইকে ইমেইলের আবিষ্কর্তা লিখে ফেলেন। শিভা দাবি করেন তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের জেরে ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু থেমে যাননি শিভা। তিনি এখনও ইমেইল আবিষ্কারের কৃতিত্ব উদ্ধার করার চেষ্টা করে চলেছেন। এমনকি দার্শনিক, ভাষাতত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ নোয়াম চমস্কিও শিভার দাবিকেই সমর্থন করেন। ৫৯ বছর বয়সী শিভার বর্তমানে কম্পিউটার সায়েন্স, সায়েন্টিফিক ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। তবুও শিভার দাবি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে ই-মেল আবিষ্কারের কৃতিত্ব!